খুলনা বিভাগ, জেলার খবর, ঝিনাইদহ, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা | তারিখঃ আগস্ট ৪, ২০২২ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 788 বার

ফিরোজ আহম্মেদ,কালীগঞ্জ(ঝিনাইদহ)প্রতিনিধি:ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ব্যাঙের ছাতার মতো যত্রতত্রভাবে গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধ শতাধিক অবৈধ ডেন্টাল ক্লিনিক। কালীগঞ্জ শহর ও বিভিন্ন গ্রাম এলাকায় প্রায় অর্ধ শতাধিক ডেন্টাল ক্লিনিকের একটিতেও সরকারি অনুমোদন নেয়। এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে নামসর্বস্ব হাতুড়ে দন্ত চিকিৎসক নামধারীরাই এসব ক্লিনিকে রোগী দেখছেন। তারা নিজেদেরকে ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন, আবার প্রেসক্রিপশন প্যাডেও নামের আগে ডাক্তার লিখছেন। এসব ডেন্টাল ক্লিনিকে অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা।কালীগঞ্জে দাঁতের চিকিৎসা দিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা ডেন্টাল ।এই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আলমগীর হোসেন বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানে বিডিএস দন্তচিকিৎসক দিয়ে দাঁতের সব ধরনের চিকিৎসা করানো হয়। ওই চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে আমি কাজ করি।তার পাশেই ফিরোজ ডেন্টাল এর সাইনবোর্ডে দেখা যায় ডা. তোফাজ্জল হোসেন নামের একজন দন্ত চিকিৎসকের নাম। উনি হলেন ফিরোজের পিতা,যিনি মারা গেছেন প্রায় দশ বছর আগে।নিজের মৃত পিতার নাম ব্যবহার করে ছেলে ফিরোজ আহমেদ অবৈধ ডেন্টাল ক্লিনিক এর ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছেন। তিনি দাতের ডাক্তার না হয়েও নামের আগে ডাক্তার লিখে ব্যানার, পোস্টার ও সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন। তিনি নিজেও রোগী দেখেন না। রোগী দেখান তার কর্মচারী দিয়ে। জানা যায়,তার দন্ত চিকিৎসার কোনো বৈধ কাগজপত্র নেয়; এমনকি একাডেমিক সার্টিফিকেটও নেয়।গণমাধ্যমে ফিরোজ ডেন্টাল এর প্রকৃত চিত্র যাতে উঠে না আসে সেই জন্য ফিরোজ আহমেদ বিভিন্ন জায়গায় দৌড়ঝাঁপ করছেন। ফিরোজ ডেন্টাল থেকে কাজ শিখে নিজে চেম্বার দিয়েছেন নলডাঙ্গা রোডে মেহেনাজ ডেন্টাল এর স্বত্বাধিকারী মেহেনাজ মিনা। তার বৈধ কোনো কাগজপত্র না থাকলেও প্রতিনিয়ত রোগী দেখছেন তিনি। শুধু তাই নয় ব্যবস্থাপত্রে রোগীদের এন্টিবায়োটিক ঔষধও লিখছেন । আম্বিয়া বেগম নামে একজন রোগী তার নিকট থেকে দাঁতের চিকিৎসা নেন এবং তাকে তিনি এন্টিবায়োটিক ওষুধও লিখে দেন। অনুরূপভাবে অপচিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন আমিন ডেন্টাল এর স্বত্বাধিকারী ভুয়া দাঁতের ডাক্তার আমিন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এই পেশার সাথে সম্পৃক্ত। তিনি জানান, প্রশাসনের কোনো নজরদারি না থাকায় আমরা আমাদের মতো করেই রোগী দেখছি। কাগজপত্র কেউ দেখতেও চায়না এইজন্য করাও হয়নি। তার চেম্বারে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ লক্ষ করা যায়। অপরদিকে ভুয়া ডাক্তার সিরাজুল ইসলাম যিনি শোভা ডেন্টাল এর স্বত্বাধিকারী। তিনি নিজেকে এত বড় ডাক্তার ভাবেন যে শুধু কালীগঞ্জেয় নয় বারোবাজারে অবস্থিত কাগজপত্রবিহীন সুমাইয়া ডেন্টালেও রোগী দেখতে যান। এই ভুয়া ডাক্তারের নিজের চেম্বারের বেহাল দশা। দাতের চিকিৎসা প্রদানে কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই তার। এভাবেই প্রতিনিয়ত ভুয়া দাঁতের ডাক্তাররা রোগীদের অপচিকিৎসা প্রদান করছেন। এতে করে সাধারণ রোগীরা অর্থ ব্যয় করেও সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ এইসব ভুয়া ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্বে যারা আছেন তারা এসব দেখেও দেখেন না । ২৮ জুলাই ২০২২ তারিখ ঝিনাইদহ সদরের চুলকনির বাজারে অবস্থিত রুমানা ডেন্টালে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত করে সিলগালা করা হয়। এসময় রুমানা ডেন্টাল এর স্বত্বাধিকারী সোহেল রানাকে ভুয়া ডাক্তার পরিচয়ে দাঁতের চিকিৎসা করায় ১৫ দিনের জেল এবং ২ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়।একই ভাবে কালীগঞ্জেও অবৈধ ডেন্টাল ক্লিনিক এর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হওয়া খুবই প্রয়োজন। কালীগঞ্জ শহরে ২০ টির অধিক অবৈধ ডেন্টাল ক্লিনিক রয়েছে। এছাড়াও উপজেলার বারোবাজারে ৫ টি, কুলাবাজারে ৩ টি,কালা বাজারে ২ টিসহ ঝিনাইদহ সদরের নলডাঙ্গা বাজার মিন্টু ডেন্টাল এবং গান্না বাজার এর আরশি ডেন্টাল, আপন ডেন্টালসহ ৩ টি অবৈধ ডেন্টাল ক্লিনিক রয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আলমগীর হোসেন বলেন, অতিসত্তর ভুয়া ডাক্তার এবং অবৈধ ক্লিনিক এর ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঝিনাইদহ জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ শুভ্রা রানী জানান,আইন বহির্ভূতভাবে যে সকল ডেন্টাল ক্লিনিক তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কাউকেই যেখানে সেখানে নিয়মবহির্ভূতভাবে দন্ত চিকিৎসা করার কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। কালীগঞ্জে অলিতে-গলিতে ভুয়া ডাক্তারদের গড়ে তুলা ডেন্টাল ক্লিনিকগুলোতে যারা ডাক্তার সেজে রোগীদেরকে অপচিকিৎসা প্রদান করছে সেই সব ভুয়া ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলো অচিরেই বন্ধ হোক এমনটি প্রত্যাশা করেন সাধারণ জনগণ।
Leave a Reply