এম ওসমান, বেনাপোল প্রতিনিধি : এক দিনের টানা কয়েক ঘন্টা বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে যশোরের শার্শা উপজেলার কয়েকশত বিঘা বরো ধান। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে বরো ধানের সাথে সাথে কৃষকের সারা বছরের স্বপ্ন। হালকা, মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাতে তলিয়ে যাওয়া মাঠের পাকা ধান নিয়ে কঠিন বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। একদিকে শ্রমিক সঙ্কট, অপরদিকে বোরো ধান কেটে বাড়ি আনতে তিনগুণ পরিশ্রমের পরও সোনালী ফসল ঘরে তুলতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে উপজেলার শত শত কৃষককে। হঠাৎ করে বৃষ্টির কারণে কেটে রাখা ভিজে ধান ঘরে তোলা, ধান মাড়াই করে শুকাতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। চোখের সামনেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে রোদ বৃষ্টি মাথায় করে অনেক কষ্টে উৎপাদিত শত শত বিঘা জমির ধান। ফলে কৃষকের বুকে বিরাজ করছে এক প্রকার চাপা আর্তনাদ। চোখে-মুখে ফসল হারানোর শঙ্কার ছাপ গুলি স্পষ্ট ফুটে উঠেছে ।
বৃষ্টিতে ধান গাছ নুয়ে পড়েছে, আবার কোথাও ভেসে গেছে, মৃদু ঝড়ের আঘাতে নুয়ে পড়া ধান, কোথাও ভারী বৃষ্টিতে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে পাকা ধান। বৃষ্টি শুরুর আগেই যাদের ধান কাটাশেষ হয়েছে তাদের অনেকেই ধান শুকাতে পারেনি।এমতাবস্থায় সঠিক সময়ে ধান শুকিয়ে ঘরে না তুলতে পারলে ওই ধান গবাদি পশুকে খাওয়ানো ছাড়া আরকোনো কাজে আসবেনা বলে জানান অনেক কৃষক। এদিকে, বৃষ্টির কারণে ধান ভিজে গেলে সেই ধান আর গোলায় রাখা যায় না। সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধ করে চাল করতে হয়। এমন ধানের চালের রংও কিছুটা লালচে হয়। নষ্ট হয়ে যায় স্বাদও।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, শার্শা উপজেলায় এ বছর বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ২২ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে। যা ছিলো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দেড় হাজার হেক্টর বেশি।তেমনি ভাবে ফলনও ছাড়িয়ে গেছে লক্ষ্যমাত্রা। মাঠ ঘুরে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। ফলন ভালো হলেও একদিনের বৃষ্টি ও মৃদু ঝড়ো হাওয়ায় ধান মাটির সাথে শুয়ে গেছে। আর ভারী বৃষ্টিতে পানি জমে যাওয়ায় অনেক জমির ফসলই তলিয়েগেছে। ফলে একদিকে যেমন ছড়া থেকে ধান ঝরে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে, তেমনি পানিতে তলিয়ে মাটিতে শুয়ে থাকা এসব ধান কেটে বাড়ি নিয়ে যেতে পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। উপজেলার নাভারণ দক্ষিণ বুরুজ বাগান গ্রামের কৃষক জামির হোসেন মিয়া জানান, এবার বোরো ধানের আবাদ খুব ভাল হয়েছিল। গত এক দিনের বৃষ্টির কারণে জমির ধান মাটিতে পড়ে গেছে। জমি থেকে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় ধানের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
কৃষক কামরুল ইসলাম জানান, জমিতে পানি জমে থাকায় ধানগাছ গুলো পানির নিচে।শেষমেশ কতটা ধান থাকবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছি। অনেক কৃষক ধারদেনা করে মাঠে ধান চাষ করে খরচের টাকাও ঘরে উঠাতে পারবেনা। যে কারনে এখন আকাশে মেঘ জমলে কৃষকদের সব সময় ভয় হচ্ছে কখন জানি কি হয়। আমির হোসেন জানান, চলতি বছর প্রায় দুই একর জমিতেবোরো চাষ করেছিলেন। কষ্টার্জিত ফসল ঘরেতোলার আগেই বৃষ্টির পানিতে ডুবেগেছে তার জমির সদ্য কাটা পাকা ধান। এতে ধানের সঙ্গে ডুবেছে কৃষকের স্বপ্নও। ফলে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন তিনি।
ধার দেনা করে বোনা ফসল এভাবে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে কৃষকদের। স্থানীয় কৃষকরা জানান, এই উপজেলায় এখনও অর্ধেকেরও বেশি ফসল রয়ে গেছে কাটা-মাড়াই ও শুকানোর অপেক্ষায়।
তারা চেয়ে আছেন প্রকৃতির উপর। যদি আকাশের মেঘ কেটে সোনালী সূর্য হাসে, তবে সামান্য হলেও ভোগান্তি কমবে তাদের। উৎপাদিত ফসলে লাভ না হোক, অন্তত হিসেবের খাতায় লসের অঙ্ক কষতে হবে না এখানকার চাষীদের ।শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল জানান, প্রাকৃতিক সমস্যায় আমাদের কারোরি হাত নেই। বৃষ্টিতে যে সমস্ত বরো ক্ষেত তলিয়ে গেছে সে সমস্ত ক্ষেতের আইল কেটে দ্রুত পানি বের করে দিতে হবে। পানি থেকে ধান উঠিয়ে উঁচু স্থানে রেখে শুকানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তারপরে সে ধান মাড়াই করতে পারলে কিছুটা হলে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে পারবে কৃষকরা।
Comments
Powered by Facebook Comments
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- » কেশবপুরে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহি খেজুরের রস ও গুড়
- » কেশবপুরে শুরু হয়েছে বোরো আবাদের প্রস্তুতি : হালের মই টানছে মানুষে
- » ঝিনাইদহে ‘ভরসার নতুন জানালা’ উদ্যোক্তা কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
- » কৃষি পন্য বহনে চালু হচ্ছে রেলওয়ে সংযোজনে অত্যাধুনিক নতুন লাগেজ ভ্যান
- » বকশীগন্জ মেরুরচর ইউনিয়নে যত্ন প্রকল্পের নগদ অর্থ পবিতরন
- » কেশবপুরে কৃষক মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত
- » কুষ্টিয়ার গ্রামবাংলার চাষীরা কনকনে শীতে খেজুর রস ও সুস্বাদু পিঠা উৎসবে ব্যাস্ত
- » ঝিনাইদহে হলুদ সরিষা ফুলের সুবাসে শিশুরা, আর মৌমাছির গুনগুন শব্দে মুখোরিত মাঠ
- » ইটের ভাটাতে পানি যাওয়ায় গুলি বর্ষণ বাড়ি ভাংচুর ও কৃষকের স্ত্রী ,ছেলে আহত
- » ডুমুরিয়ায় ৮’শ ফলন্ত সবজি গাছ কেটে দেড় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি